1. admin@dailynaogaonnews.com : admin :
রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৩:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
নওগাঁয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রজেন সরকারদের আশা ও একজন ব্রজেন সরকার নওগাঁর পত্নীতলায় ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে আলোচনা সভা ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনা পেলেন ডেইলি নওগাঁ নিউজ ডট কম এর উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত নওগাঁ শহরের সরু রাস্তায় ইজিবাইকের দাপটে তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে শহরবাসী রাজশাহী গোদাগাড়ীতে অটো ছিনতাই চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ নওগাঁর ধামইরহাটে এসএসসি পরিক্ষার্থী ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিদায় নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করলেন-প্রধানমন্ত্রী রমজান মাস জুড়ে ইফতারি বিতরণ করবেন নওগাঁর মহাদেবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ নওগাঁর পত্নীতলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষনা নওগাঁর পোরশায় গরম পানিতে নারী হত্যার অভিযোগে বৃদ্ধ আটক

নওগাঁয় সানোয়ারের তৈরি ধান মাড়াই মেশিনের কদর বেড়েছে

  • প্রকাশিত : সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ৩১ বার পঠিত

গোলজার রহমান,ধামইরহাট প্রতিনিধিঃ নওগাঁর ধামইরহাটে উপজেলার দক্ষিণ চকযদু তিন নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রহিমের ছেলে সানোয়ার হোসেন। ১৯৯৪ সালে অর্থের অভাবে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। লেখাপড়া বাদ দিয়ে বাধ্য হয়ে তিনি বাবার সাথে কাঠ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। একদিন শ্রমিক সংকটের কারণে বাবার সাথে মাঠে ধান মাড়াই করতে গিয়ে পরেন বিপাকে। এমন বিড়ম্বনার বিষয়টি মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে তাঁর। একটি আধুনিক যন্ত্র তৈরি করে কিভাবে শ্রমিক ছাড়াই খুব সহজে ধান কাটা এবং মাড়াই করা যায় এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।

এরপর ২০১০ সালে কিছু জমি বর্গা রেখে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার দেনা করে পাঁচ থেকে সাত লক্ষ টাকা নিয়ে উপজেলার আমায়তাড়া বাজার এলাকায় তিন হাজার টাকায় মাসিক বেতনে ঘর ভাড়া নেন। এরপর সেখানে গড়ে তোলেন একটি ওয়ার্কশপ। অর্থের অভাবে খুব একটা লাভের মুখ না দেখলেও সেখানে অনেক কষ্টে কেটে গেছে তাঁর দশটি বছর। লক্ষ্য ছিল ভালো মেশিন তৈরি করে কৃষকদের মাঝে বিক্রি করার। এভাবেই ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর পরিচিতি।

আলাপচারিতায় সময় ছানোয়ার বলেন, অনেক কষ্ট করে ছোট্ট পরিসরে শুরু করেন ধান মাড়ায় মেশিন তৈরির একটি কারখানা। প্রথমে পাঁচ জন শ্রমিক দিয়ে ধান মাড়ায় হারভেস্টার (ভূত) মেশিন তৈরির কাজ শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে ছানোয়ার নিজেই ধান মাড়াই মেশিন তৈরিতে দক্ষ কারিগর হয়ে গড়ে ওঠেন। তারপর পেছনের দিকে তাঁকে আর তাকাতে হয়নি। এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শুধু তাই নয় এই ওয়ার্কশপে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। এতে করে ওই শ্রমিকদের পরিবারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার আমায়তাড়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ভবন কমপ্লেক্সের পাশে সাড়ে সাত শতক জমির উপর ছেলের নামে গড়ে তুলেছেন ‘রাসেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ‘। বাবার সাথে থেকে ছেলে রাসেলও হয়ে উঠেছেন একজন দক্ষ কারিগর। সেখানে ২০ থেকে ২৫ টি ধান মাড়াই মেশিন বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন তিনি। এসব মেশিন কিনতে নোয়াখালী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, রাজশাহী, চাপাই ও রংপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা এসে ভিড় জমাতে দেখা যায়। প্রকারভেটে এক একটি হারভেস্টার মেশিনের দাম রাখা হয়েছে সাড়ে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা।

সানোয়ার আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে এই শিল্পকে টিকে রাখা অনেকটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের কাছ থেকে প্রনোদনাসহ বিদেশে রপ্তানি করার মত সহযোগিতা পেলে এ শিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। ফলে একদিকে আধুনিক যন্ত্রে কৃষি ক্ষেত্রে যেমন বিপ্লব ঘটবে ঠিক তেমনি এ শিল্প থেকে সরকারও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।

ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ২৫ থেকে ২৮ জন শ্রমিক দিয়ে একটি ধান মাড়াই মেশিন (হারভেস্টার) তৈরিতে সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ দিন সময় লাগে। এতে লোহার এ্যংগেল, পাতি, শীট, ডেপিনশিয়াল, ১৩ রিংয়ের দুটি এবং ১০ রিংয়ের ১ টি চাকা, ৩২ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ হর্সের ডিজেল চালিত মেসিন, হুইল এবং হুইল বক্স, ওয়ারিংসহ রংয়ের প্রয়োজন হয়। মহাজনের কাছ থেকে এসব জিনিসপত্র বেশিরভাগ সময় বাকিতে কিনতে হয়। ফলে লোহাসহ সবকিছু কিনতে দাম বেশি পড়ে যায়। এতে করে কারেন্ট বিল, লেবার খরচ, মেসিনসহ সব বাদ দিয়ে লাভ হয় মাত্র ৮ থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। সিজিনে ১০ টির মত মেশিন বিক্রি করা সম্ভব হলে কোন রকমে লাভের মুখ দেখা যায়।

জামালপুর শেরপুর এলাকার ক্রেতা মোজাফফর হোসেন জানান, তাঁর এলাকায় হারভেস্টার মেশিনের কোন কারখানা নেই এবং কিনতেও পাওয়া যায় না। এলাকায় শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা এবং মারাই খুব সমস্যা হয়। এ কারণেই তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে একটি হারভেস্টার মেশিন কেনেন।

অপর ক্রেতা চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাসেম আলী ধান মাড়াই মেশিন দিয়ে এলাকায় ফাল্গুন চৈত্র মাসে সরিষা, গম, কালাই এবং বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে ইরি ধান মাড়াই কাজে ব্যবহার করবেন। এতে প্রতি সিজিনে খরচসহ সব বাদ দিয়ে এক লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ টাকা আয় করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন বলে জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক আল জোবায়ের বলেন, উপজেলায় রাসেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপসহ ছোট বড় প্রায় ৪৪ টি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ গড়ে উঠেছে। মন্ত্রণালয় থেকে সারকুলেশন হলে আবেদনের মাধ্যমে তাঁদেরকে তালিকাভুক্ত করা হবে।
এসব ওয়ার্কশপ থেকে তৈরি হারভেস্টার মেশিনের কোয়ালিটি ভালো হওয়ার কারণে উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে তিনি জানান।
এদের মধ্যে পত্নীতলা উপজেলার ভাই-ভাই এবং এমএম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ তালিকাভুক্ত রয়েছে।

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

© All rights reserved © 2022 Daily Naogaonnews
Theme Customized By Shakil IT Park